দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য যে কারণে না খাওয়ার পরামর্শ প্রদান করি।

দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য যে কারণে না খাওয়ার পরামর্শ প্রদান করি।
আমরা ফ্রি র‍্যাডিক্যালস ও অক্সিডাইজড খাবারের কথা শুনেছি। অক্সিডাইজড খাবার খাওয়া অব্যাহত রাখলে দেহে অতিরিক্ত ফ্রি র‍্যাডিক্যাল ডিএনএ ও কোষের ক্ষতিসাধন করে যা, ডিজেনারেটিভ রোগের (ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, থাইরয়েড হরমোন জটিলতা, অন্যান্য হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, আর্থাইটিস, ইউরিক অ্যাসিড সমস্যা, ইত্যাদি) অন্যতম কারন। এই অতিরিক্ত ফ্রি র‍্যাডিক্যালগুলো থেকে কোষকে মুক্ত বা স্বাভাবিক (নিউট্রালাইজড করতে) রাখতে প্রচুর এনজাইম (উৎসেচক) প্রয়োজন। খাদ্য বিপাক প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এনজাইম। অথচ এই এনজাইম যদি শুধু ফ্রি র‍্যাডিক্যাল থেকে কোষ রক্ষায় ব্যাবহার হয়। তবে একসময় দেহে এনজাইমের স্বল্পতা দেখা দেয়। আর দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য খেলে সেগুলো পরিপাকে অতিরিক্ত এনজাইমের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হোল শিশুরা তাহলে কি করবে? এক্ষেত্রে শিশুরা অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ পান করবে। কারন শিশুদের দেহে প্রচুর এনজাইম থাকে যা দুধ পরিপাকে যথেষ্ট। মায়ের দুধ ব্যতীত অন্য কোন দুধই শিশুকে দেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে একটি কথা বলে রাখা ভালো, এলার্জিতে আক্রান্তরা দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য পরিহার করুন। ইন্টারেস্টিং একটি ফ্যাক্ট হলো শুধুমাত্র মানুষ ব্যতীত পৃথিবীর সকল প্রানী কেউই নিজের মায়ের দুধ ব্যাতিত অন্য প্রানীর দুধ খায় না। কেবল মাত্র আমরাই বিভিন্ন চটকদারি বিজ্ঞাপন এবং তাদের কোম্পানির দুধে অমুক তমুক ভিটামিন ক্যালসিয়াম আছে বলে রুপকথার যে গল্প আমাদের প্রদান করে  তাই বিশ্বাস করে বছরের পর বছর দুধ খেয়ে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত করছি।
দোকানে বিক্রিত সব দুধ অক্সিডাইজড। এগুলো হোমজিনাইজেশন এবং পাস্তুরাইজেশনের ফলে অক্সিডাইজড ফ্যাট তৈরি করে যা এনজাইম নষ্ট করে দেয়। প্রাকৃতিক অবস্থায় দুধে ল্যাকটোফেরিন (অ্যান্টিওক্সিড্যান্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং ইমিউন রেগুলেটর) থাকে। কিন্তু পাস্তুরাইজেশন করলে এসব উপকারী উপাদান ধ্বংস হয়ে যায়। গাভি ও ছাগলের দুধে পাওয়া পুষ্টি তাদেরই বাচ্চাদের বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত। বাছুরের বৃদ্ধি জন্য যা প্রয়োজনীয় তা মানবশিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় নয়। প্রাকৃতির দিকে একটু খেয়াল করলে দেখা যায়, মানুষের দুধ শুধু বাচ্চাদের জন্য। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর কোন প্রাণী দুধ পান করে না। এটাই প্রাকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। দুধে ল্যাকটোজ (কার্ব) এবং কেসিন (প্রোটিন) থাকে যা হজমের জন্য অতিরিক্ত এনজাইম প্রয়োজন। আমাদের বয়স বারতে থাকার সাথে সাথে এসব এনজাইমের পরিমাণ কমতে থাকে। ফলস্বরূপ, বদহজম হয় এবং অন্ত্রের (কলোনের) স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয় (ডায়রিয়া, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু, অ্যালার্জি ইত্যাদি) ।
আরেকটি বিষয়, খাবারের গরুগুলোকে অন্ধকার ও রৌদ্রহীন জায়গায় রেখে কৃত্রিম (তাদের জন্য প্রাকৃতিক নয়) খাবার খাওয়ানো হয়। ফলে তাদের সুস্থ রাখতে অবশ্যই বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক এবং হরমোন প্রয়োগ করা হয়। সেই গরুর গোস্ত ও দুধ মানুষ খেলে ওইসব হরমোনের মারাত্মক বিরূপ প্রভাব মানুষের দেহে দেখা দেয়। কোলনের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাওয়া মনবদেহে হরমোনজনিত রোগ প্রকট আকারে দেখা যাচ্ছে এবং মোটা স্থুল মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলছে।
তবে দুগ্ধজাত পণ্যের মধ্যে কেবল প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা গাভীর দুধ থেকে তৈরি ঘি ও বাটার খাওয়া জোর পরামর্শ প্রদান করি আমি। শুধু তাই নয়; আমার ক্লিনিকে হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ঘি, বাটার এবং মেডিসিন্যাল নারিকেল তেল দিয়ে রান্না খাবার খেতে দেই।