অন্ত্র বা কোলনের জন্য স্বাস্থ্যকর নাশতা


মানবদেহের অন্ত্রের কাজ শুধু খাবার পরপাক করা নয় বরং এটি আরো বেশি ভূমিকা রখে। তাই আমি সবসময় বলি, আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য আমাদের কোলনের সুস্থতার উপর প্রায় শতভাগ নির্ভরশীল। সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে যদি সবকিছুর আয়োজন করা হয় কিন্তু আপনার কোলন পরিস্কার ও সুস্থ না থাকে তাহলে কোনো চেষ্টাই আপনাকে সাহায্য করবে না। কোলোন পরিস্কার রাখার পাশাপাশি কোলোনে বসবাসরত উপকারী ব্যাকটেরিয়ার উপযোগী খাবার প্রয়োজন। এ সম্পর্কে কিছু খাদ্য এবং তা খাওয়ার নিয়ম বলবো।


কোলন সুস্থ রাখতে নিচের উপকরণের সমন্বয়ে নাশতা তৈরি করুন
• অর্গানিক জাম্বু ওটস।
• আয়োয়াইজড অ্যালক্যালাইন পানি বা বিশুদ্ধ পানি।
• ইনুলিন বা যে কোন দ্রবণীয় আঁশ (ফাইবার) ১ চা চামচ।
• অর্গানিক চিয়া বীজ ১ চা চামচ।
• অর্গানিক তিস বীজ ১ চা চামচ।
• প্রাকৃতিক বা অর্গানিক ক্র্যানবেরি ১ টেবিল চামচ।
• প্রাকৃতিক বা অর্গানিক গজি বেরি ১ টেবিল চামচ।
• লেসিথিন ১ টেবিল চামচ।
• মেডিসিন্যাল নারকেল তেল ১ টেবিল চামচ।
• প্রাকৃতিক অপরিশোধিত মধু স্বাদমতো (তবে মেডিসিন্যাল মধু হলে ভালো) ।


এসব উপকরণ একসাথে পানিতে কমপক্ষে ৪৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। পানির পরিবর্তে ডাবের পানি বা বাড়িতে তৈরি কাঠ বাদামের দুধ ব্যাবহার করতে পারেন। এগুলোর সমন্বয়ে কোলনের জন্য অত্যান্ত স্বাস্থ্যকর এবং দেহের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর নাশতা প্রস্তুত হলো। এখান থেকেই কোলনের উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো তাদের উপযোগী খাদ্য গ্রহণ করবে এবং আপনি থাকবেন সুস্থ, সবল ও প্রফুল্ল।


অন্ত্রের রয়েছে স্বাধীন স্নায়ুতন্ত্র


আমাদের অন্ত্রে অসংখ্য নিউরন বা স্নায়ুন্ত্রের সাথে সংযুক্ত, যে কারনে একে মানবদেহের ‘দ্বিতীয় মস্তিস্ক’ বা সেকেন্ড ব্রেইনও বলা হয়। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়, শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের চেয়ে মানবদেহের অন্ত্র বা কোলন বেশি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। এটি মস্তিস্কের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও স্বাধীনভাবে নিজের কার্যক্রম চালায়।


অন্ত্রের এই স্বাধীনভাবে কাজ করার পদ্ধতিতেকে অভ্যন্তরীণ স্নায়ুতন্র (ইএনএস বা enteric nervous system) বলা হয়, যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের (সিএনএস বা central nervous system) একটি শাখা। যার কাজ পরিপাকতন্ত্রের আচারণ নিয়ন্ত্রণ করা। এই পুরো ব্যবস্থাপনাটি নিউরনের সমন্বয়ে তৈরি একটি সুশৃঙ্খল নেটওয়ার্কের মতো কাজ করে। যার মাধ্যমে পাকস্থলীর কার্যক্রম ও হজমক্রিয়া সম্পন্ন হয়। মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার পিছনে অন্ত্রের স্বাস্থ্য অভ্যন্ত গ্রুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা আমাদের রোগ প্রতিরোধক কোষের ৭০ শতাংশ অন্ত্রের ভিতরে থাকে।
অন্ত্রের সুস্থতায় খাদ্য নির্বাচন


আমাদের অন্ত্রে রয়েছে কয়েক ট্রিলিয়ন মাইক্রোবায়াল বা জীবাণুর বসতি। দেহে এই জীবাণুগুলোর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এগুলো পুষ্টিকর উপাদান হজম করতে সাহায্য করে। প্রতিটি মাইক্রোবায়াল গ্রুপ একেক ধরনের খাবারের উপর কাজ করে। তাই বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে, যা মানবদেহের সুস্থতার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পর্কিত। আরো সহজভাবে বলতে গেলে, দেহের মাইক্রোবাসের ভূমিকা  পোষা প্রাণীর মতো, যার যত্ন নিতে হবে এবং সচেতনতার সাথে লালন পালন করতে হবে। যারা সবসময় একই ধরনের খাবার খায়, তাদের অন্ত্রের জীবাণুগুলো বেশি সক্রিয় বা শক্তিশালী থাকে না।
অন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত মানসিক স্বাস্থ্য


আপনার অন্ত্রে যদি সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে আপনি কতটা মানসিক চাপে আছেন সেটা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কেননা আমাদের অন্ত্রের সঙ্গে মেজাজ যুক্ত থাকার পেছনে একটি সাধারণ কারন হোল, আমাদের পরিপাকতন্ত্রের আনুমানিক ৮০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ সেরোটোনিন উৎপন্ন হয়। সেরোটোনিন এক ধরনের রাসায়নিক বার্তাবাহক যার সাথে আমাদের পরিপাক ক্রিয়া থেকে শুরু করে মানসিক অবস্থা ও রোগ সংক্রান্ত শরীরের নানা কার্যক্রম জড়িত। সেরোটোনিনের নিঃসারণের উপর নির্ভর করে আমাদের মেজাজ ভালো থাকা না থাকা। দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ এবং অনিয়ন্ত্রিত ভাবাবেগ শরীরে সেরোটোনিন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে যা আমাদের মনমেজাজ, উদ্বেগের মাত্রা এবং সুখের মতো মানসিক অবস্থা প্রভাবিত করতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে অন্ত্রের সুস্থ ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকাও অপরিসীম।


কোলন বা অন্ত্র বা পরপাকতন্ত্র সুস্থ রাখার জন্য কয়েকটি টিপস
• অন্ত্রের মাইক্রোবায়াল সক্রিয় ও শক্তিশালী রাখতে বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার খান। খাবারগুলো অবশ্যই হতে হবে অর্গানিক, প্রাকৃতিক বা নিরাপদ। তবে শারীরিক কোনো জটিলতার করনে বিশেষ কোন খাবার নিষেধ থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসক বা ডায়েটেশিয়ানের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
• পছন্দমতো উপায়ে নিজের মানসিক চাপ মোকাবিলা করুন (স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট) । সেটা হতে পারে ধ্যান, বা যোগব্যায়াম বা ইয়োগা।
• আপনার যদি ইতিমধ্যে অন্ত্রে সমস্যা থাকে, তাহলে অবশ্যই ধূমপান, অ্যালকোহল, ক্যাফিন থেকে বিরত থাকুন।
• ভালোভাবে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। আপনি যদি ঘুমের ধরন পরিবর্তন করে দেহঘড়ির ছন্দ ব্যাহত করেন, তবে আপনার অন্ত্রের জীবাণুগুলোর জীবনচক্রও বাঁধাগ্রস্ত হবে।
একটি বিষয়, সুস্থ অন্ত্র বা অন্ত্রের সুস্থ ব্যাকটেরিয়া আর মানুষের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতার মধ্যে কোনো না কোনো সংযোগ আছে। অসুস্থ অন্ত্র থেকে দেহের মাল্টিপল ডিজঅর্ডারস দেখা দেয়ার আশঙ্কাও আছে। অ্যালার্জিজনিত সমস্যা, স্কিন ডিজিজ, হাইব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, এমনকি হৃদরোগসহ ডিজেনারেটিভ বা ক্রনিক রোগের উৎপত্তিও অন্ত্র থেকে হতে পারে।